আজওয়া খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু।
বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন আছে, খেজুরে তার চেয়ে বেশি গুণ আছে। আজওয়া খেজুর হলো এক ধরনের বিশেষ জাতের খেজুর যার উপকারিতা হাদিস এবং বিজ্ঞানের দ্বারা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত I
বিশ্ব নবীর নিজ হাতে পোড়া বীজ লাগানো খেজুরই আজওয়া। যা দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও উন্নতমানের সুস্বাদু খেজুর। এ খেজুরের গুণ, বরকত ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আজওয়া খেজুরকেই বরকতময় খেজুর বলে। এ খেজুরটি সারা দুনিয়ার মানুষের বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে এ খেজুর রোপন করেছিলেন।
আজওয়া খেজুর সম্পর্কে হাদীস সমূহঃ
উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাতদিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন।’ (মুছান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৩৯৪৫)
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আয়্যুব ও ইবনু হিজর (রহ.)… আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মদিনার আলিয়া অঞ্চলের (উঁচু ভূমির) আজওয়া খেজুরে শেফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালের এর আহার বিষনাশক (ঔষধের কাজ করে)।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৬৮)
সাদ (রা.) এর বর্ণনা রয়েছে, তিনি বলেন- আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৪৫-৫৭৬৮; মুসলিম, হাদিস : (২০৪৭)-১৫৫; আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৬)
আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৮৪৭২; অনেকে বর্ণনাটি দুর্বল বলেছেন।)
অন্য হাদীসে এসেছে আজওয়া খেজুর হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের খেজুর। সহিহ বুখারী:৫৩৫৭।
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে…।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৬৬)
সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। আবু দাউদ, হাদিস ৩৮৩৫।
আজওয়া খেজুরের উপকারিতা
১. চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে আজওয়া খেজুরে রয়েছে আমিষ, শর্করা, খাদ্য আঁশ এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট।
২। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে তে ভরপুর এই আজওয়া খেজুর।
৩. ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪. আজওয়াতে আছে ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন এর মতো স্বাস্থ্যকর উপাদান।
৬. এটি হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য ভীষণ উপকারী। হাদিসের বর্ণনায় এটা বোঝা যায়। রাসুল (সা.) তার এক সাহাবিকে হৃদরোগের জন্য আজওয়া খেজুরের তৈরি ওষুধ খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। লিভার ও পাকস্থলির শক্তি বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৭. ফুসফুসের সুরক্ষায় কাজ করে ও মুখগহব্বরের ক্যান্সারজনিত রোগ নিরাময় করে।
৮. এতে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কোলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
৯. আজওয়া খেজুরে রয়েছে ৭৭.৫%কার্বোহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
১০. এই খেজুরে আছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন যা হাড়,দাঁত,নখ, ত্বক, ও চুল ভাল রাখে।
১১. গবেষকদের মতে শুকনা খাবারের মধ্যে খেজুরেই সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। বিপদজ্জনক অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে পলিফেনল। খেজুরের চেয়ে ভালো পটাশিয়াম উৎস আর হয় না। এটা সোডিয়ামেরও ভালো উৎস। কিডনি ও স্ট্রোক জটিলতা এড়াতে এর ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকরা প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন
১২.লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।
১৩. অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন। প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে।
১৪. ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
১৫. প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
১৬. এতে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ – যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে।
১৭. স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
১৮. নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত।
১৯. পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
২০. উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
২১. নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে আজওয়া খেজুর।
সবচেয়ে বড় কথা হল এ খেজুরের গাছের গুটলি গুলো হুজুর সাঃ নিজ হাতে বপন করেছেন, সে হিসাবে অন্তরে মহব্বত নিয়ে বরকতের জন্য ও খেতে পারেন। আর শেফার নিয়তে তো খেতেই পারেন নিঃসংকোচে। আল্লাহ সহায় হউক।
আজওয়া খেজুরের ইতিহাসঃ
ইসলাম গ্রহণের আগে হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন ইয়াহুদির অধীনে ক্রীতদাস। তিনি যখন তার কাছ থেকে মুক্তি চাইলেন, তখন ইয়াহুদি তাকে মুক্তি দিতে আপত্তি জানায়। বারবার বলার পর ওই ইয়াহুদি বাস্তবে অসম্ভব একটি শর্তসহ দুইটি শর্ত জুড়ে দেয়। যা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব নয়। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মুক্তি দেবে না। পরে সে ইহুদী ২ টা শর্ত জুড়িয়ে দেয়।
১ম শর্ত- ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দেওয়ার শর্ত দিয়েছিল।
২য় শর্ত- ৩০০ খেজুর গাছ রোপন করে বাগান সাজিয়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছিল। এ শর্তটি ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একেবারেই অসম্ভব।
ইয়াহুদি জানতো যে, সালমান ফারসি কোনোভাবে ৪০ উকিয়া স্বর্ণ সংগ্রহ করতে পারলেও অল্প সময়ে খেজুর গাছ রোপন এবং বাগান সাজিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর তার মুক্তি পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা খেজুর রোপন থেকে বাগান হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার।
কোনো উপায় না দেখে হজরত সালমান ফারসি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে ইয়াহুদির দেয়া শর্ত বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ উকিয়া স্বর্ণ ব্যবস্থা করলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইকে (দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে) সহায়তা কর। তখন সাহাবাগণ আমাকে সাহায্য করলেন; কেউ দিলেন ত্রিশটি চারা, কেউ বিশটি, কেউ পনেরটি আবার কেউ দশটি; প্রত্যেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী (খেজুরের চারা) দিলেন। এভাবে ৩০০ চারা হয়ে গেল।
বিশ্বনবি এ বীজগুলো রোপনের উদ্দেশ্যে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন গর্ত করার জন্য। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে গর্তে বীজ রোপন করলেন। আর সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন বীজ রোপন করা গর্তে পানি দেয়ার জন্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও এগুলো লাগানোর জন্য গর্ত কর। এরপর (গর্ত করা হয়ে গেলে) আমাকে জানাবে, আমি নিজ হাতে চারাগুলো রোপণ করব। আমি গর্ত করলাম। সাথীরা আমাকে এতে সাহায্য করল। গর্ত করা শেষ হলে প্রিয় নবিকে জানালাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে নিজ হাতে চারাগুলো রোপণ করলেন। আমরা এগিয়ে এগিয়ে দিলাম আর তিনি নিজ হাতে সবগুলো চারা রোপণ করলেন। যে সত্তার হাতে সালমানের প্রাণ তাঁর কসম! ৩০০ চারার একটিও মরেনি!
এ খেজুরই হল আজওয়া খেজুর।
**ভালো মানের আজওয়া খেজুর কিনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।